প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ঢল: বাংলাদেশে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

রিপোর্ট:

গত দুই মাস ধরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবাহ বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তবে, নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর), যা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ হিসেবেও পরিচিত, এখনও ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪.৯৭ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুসারে বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভ রয়েছে ১৯.৮২ বিলিয়ন ডলার। আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ২ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯.৭৬ বিলিয়ন ডলার। ফলে দেখা যাচ্ছে, সামান্য হলেও রিজার্ভ বেড়েছে।

এছাড়া, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) দাঁড়িয়েছে ১৪.৭১ বিলিয়ন ডলারে। এই পরিমাণের মাধ্যমে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়, কারণ সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানির সমান রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

আইএমএফ সেপ্টেম্বর মাসের জন্য বাংলাদেশকে ১৪.৮৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেপ্টেম্বর মাসে তা অগ্রাহ্য করে কিছু পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে, যদিও বর্তমানে ডলার বিক্রি অনেকটা কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, “বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যে আমাদের সমস্যা হয়নি, আমরা ভাগ্যবান।” তবে, তিনি সতর্ক করেছেন যে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হলে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।

অন্যদিকে, করোনার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। তাই, রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চেয়েছিল। পরে, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সম্প্রতি, নতুন সরকারের সঙ্গে ব্যাংকখাত সংস্কার ও অর্থপাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইএমএফ ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের প্রসঙ্গে বলা যায়, গত জুলাইয়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে নতুন সরকারের প্রতিষ্ঠার পর পুনরায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আন্দোলন শুরু হয়েছে। আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.২২ বিলিয়ন ডলারে, যা সেপ্টেম্বর মাসে ২.৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত জুন মাসের রেমিট্যান্স ছিল ২৫৪ কোটি ডলার।

এভাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে একটি ইতিবাচক সংকেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *