ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী সম্প্রতি একটি রহস্যময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। নিজেকে নিখোঁজ করার আগে তিনি নিজের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সোমবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী, নাজনীন আকতার, দুই সন্তানকে নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বাসা ছেড়ে চলে যান। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচিত এই ব্যাংকার নিজে একা বাসা থেকে বের হয়ে যান। এখন ব্যাংকের পরিচালকদের দৃষ্টিতে তিনি নিখোঁজ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে আর দেখা যায়নি। বুধবার, তিনি ব্যাংকেও যোগ দেননি। পরিস্থিতি এতটা জটিল হওয়ার পর ব্যাংকের পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে ঘটনাটি জানালে, রাতেই উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শফিউদ্দিন আহমেদকে এমডির চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মোকাম্মেল হক চৌধুরী বনানীর একটি বহুতল ভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর ২,৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি নিজস্ব, এবং তাঁর পরিবারের ব্যবহৃত গাড়ি দুটি ছিল: একটি টয়োটা প্রাডো ও একটি মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার। নিরাপত্তা কর্মীদের মতে, তাঁর বাসায় বাইরের কেউ তেমন আসতেন না, তবে মাঝে মাঝে শ্যালক ও শাশুড়ি আসতেন।
গত ২৭ আগস্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। নতুন পর্ষদের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে তাঁরা মোকাম্মেল হকের অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নামে থাকা একটি ব্যাংক হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, গত মঙ্গলবার সর্বশেষ তিনি ব্যাংকে গিয়েছিলেন, তবে বেশি সময় সেখানে কাটাননি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিবেদক বনানীতে তাঁর বাসায় গিয়ে জানতে পারেন, সোমবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বাসা ছাড়েন এবং মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার গাড়িটি তাঁদের পৌঁছে দেয়। বাসার গৃহকর্মীদের এর আগেই ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মোকাম্মেল হক চৌধুরী বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর টয়োটা প্রাডো গাড়িতে ফেরেন, এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি গাড়ি ছাড়াই বাসা থেকে চলে যান। গাড়ির চালক বাসার নিচে অপেক্ষা করলেও তিনি কিছু জানাননি।
ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ফরিদউদ্দীন আহমদ বুধবার সকালে ব্যাংকে না যাওয়ার কারণে কিছু কর্মকর্তাকে বাসায় পাঠান। মোবাইল বন্ধ থাকায় এবং তাঁকে বাসায় না পাওয়ায় চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানান, মোকাম্মেল হক ‘নিখোঁজ’। বুধবার রাতেই পরিচালনা পর্ষদ ডেকে শফিউদ্দিন আহমেদকে এমডির চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মোকাম্মেল হক পরিবারসহ বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন এবং তাঁকে সহায়তা করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৬৪ শতাংশই এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে এবং খেলাপি ঋণের হার ৪২ শতাংশেরও বেশি।
এস আলম গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। মোকাম্মেল হক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যা তাঁকে অনেক সুবিধা দিয়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ফরিদউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বুধবার সকাল থেকেই এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।