৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সাবেক ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিখোঁজ রয়েছেন। এমনকি তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা যাচ্ছে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। হারুন অর রশীদ সম্প্রতি অজ্ঞাত স্থান থেকে ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভিতে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তার ভূমিকা, আন্দোলন দমনে সরকারের নীতিমালা এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, “আমাকে মোয়া বানানো হচ্ছে,” যা তার প্রতি সরকারি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। হারুন বলেন, “আমাকে ঘিরে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছিল, কিন্তু আমি চুপ ছিলাম। ৮ আগস্ট সরকারের নির্দেশে আমি ডিএমপি কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করি, কিন্তু তিনি আমাকে যোগদান করতে নিষেধ করেন এবং নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেন।”
তিনি আরও জানান, “যখন আমি যোগদান করতে চেয়েছিলাম, তখন দুই দিন পরই আমার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, কমিশনার ও আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আমি অবাক হলাম, কারণ আমি তো ডিবিতে কাজ করি, মারামারি করতে যায় না। অতিরিক্ত কমিশনার হয়ে এমন মামলা হওয়া মানে যে, কিছুটা ঝুঁকি আছে।”
হারুনের দাবি, “এখন জনগণকে ধরে পেটানো হচ্ছে, এবং আমি যদি যোগদান করি, তাহলে আমাকে দিয়ে জোর করে চাকরি করাবেন।” এই পরিস্থিতির কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং পরিস্থিতি কিছুটা সময়ের জন্য পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হারুনকে গণপিটুনি খাওয়ার গুজব ছড়ায়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এগুলো সব গুজব, যারা এগুলো ছড়ায় তারা শুধুমাত্র টাকা কামানোর জন্য এটা করে।” পুলিশ সদর দপ্তরে পালানোর ঘটনায় তিনি বলেন, “আমি পুলিশ সদর দপ্তরে যাইনি।”
সরকারের প্রধান (শেখ হাসিনা) সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি ছোট মানুষ, পুলিশের প্রধানও নই। আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কেন আলোচিত হয়ে উঠেছি, কারণ আমি মানুষের সেবা করেছি। যারা সমস্যায় পড়েছে, তারা থানায় না গিয়ে ডিবিতে এসেছে।”
হারুন আরও বলেন, “১২ বছর চাকরি করেছি, আমার কোনো অন্যায় থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে ছাড়তেন। এখন আমি একটু অড পজিশনে আছি। যখন বলা হচ্ছে হারুন খারাপ, তখন আমাকে প্রশ্ন করুন, আমি আসলে কী খারাপ করেছি?”
তিনি জানান, “আমি অনেক বড় কাজ করেছি, কিন্তু কখনও পুরস্কার পাইনি। আমি শুধু জনগণের স্বার্থে কাজ করেছি।”
এই পরিস্থিতিতে হারুন অর রশীদের মন্তব্যগুলি সরকারের বিরুদ্ধে একটি উন্মোচিত তথ্যের ভাণ্ডার হতে পারে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।