ভারতে গত ছয় বছর ধরে প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে ১০ ডলারে। সম্প্রতি রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে পাঁচ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানির প্রতিটি চালানের মূল্য ছিল একই—১০ ডলার। অথচ এ বছর দেশে ইলিশের দাম বাড়ায় এই একই দামে রপ্তানি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। ওই বছর প্রথম চালানে ইলিশের প্রতি কেজি রপ্তানিমূল্য ছিল ৬ ডলার, যা তখনকার বিনিময় মূল্য অনুযায়ী ৫০৭ টাকা। এরপর ২০তম চালানে এসে রপ্তানিমূল্য বেড়ে ১০ ডলারে উন্নীত হয়। গাজীপুরের একুয়াটিক রিসোর্সেস লিমিটেড প্রথম এই দরে ইলিশ রপ্তানি করে এবং পরবর্তী সকল চালানেও একই মূল্য বহাল থাকে।
গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫৬ লাখ কেজি ইলিশের ১,০৭২টি চালান রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ বা ১,০১৭টি চালানের রপ্তানিমূল্য ছিল ১০ ডলার। এবছর অনুমতি পাওয়ার পর পাঁচ লাখ কেজির ১৫৯টি চালানও ১০ ডলারে রপ্তানি হয়েছে।
পাঁচ বছর ধরে প্রতি কেজি ১০ ডলারে ইলিশ রপ্তানি করে আসছে চট্টগ্রামের প্যাসিফিক সী ফুডস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দোদুল কুমার দত্ত বলেন, “বর্তমান বাজারে বড় আকারের ইলিশ ১০ ডলারে রপ্তানি করা সম্ভব নয়। তাই আমরা ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ রপ্তানি করছি।”
ভারতে বাংলাদেশি ইলিশের মূল্য বর্তমান বাজারে ১,৫০০ রুপি (২,১৬৭ টাকা বা ১৮ ডলার) হলেও দেশে একই আকারের ইলিশ কিনতে হচ্ছে ১,৮০০ থেকে ২,০০০ টাকায়।
রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানি–রপ্তানির ক্ষেত্রে ঘোষিত মূল্য এবং বাস্তব দামের মধ্যে একটি ফারাক থাকে। দুই পক্ষের ব্যবসায়ীরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় এই ব্যবধান সমস্যা তৈরি করে না। কেউ যদি ১০ ডলারের রপ্তানিমূল্য ঘোষণা করে, তবে তারা বাস্তবে ১৫ ডলারের দরে লেনদেন করে, এবং এই ফারাক অনানুষ্ঠানিকভাবে সমন্বয় করে নেয়।
বাংলাদেশ থেকে ১৫ ডলার দরে ইলিশ রপ্তানির নজির রয়েছে, তবে তা বিরল। ২০২১ সালে চট্টগ্রামের মাসুদ ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস কমপ্লেক্সের মাধ্যমে চারটি চালানে ১৭,৬৮০ কেজি ইলিশ এই দামে রপ্তানি হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, “এবার ৫০ টন রপ্তানির অনুমতি পেয়েছি। আমি কলকাতার ক্রেতাকে ১০ থেকে ১৮ ডলারের প্রস্তাব দিয়েছি, কিন্তু এখনো সাড়া পাইনি।”
বাংলাদেশের ইলিশ ছাড়াও ভারত মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করে, তবে বাংলাদেশের ইলিশের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে প্রতি কেজি ইলিশ আমদানি হয়েছে ৬ ডলার ৭৪ সেন্টে।
রপ্তানিকারকদের মতে, দেশে ইলিশের রপ্তানিমূল্য পরিবর্তনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু বর্তমানে দেশের বাজারে ইলিশের উচ্চমূল্য থাকা সত্ত্বেও ১০ ডলারের রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।