মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতে, চলচ্চিত্রের সংস্কারে যা করা দরকার

ফারুকী বলেন, “চলচ্চিত্রবিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে, তার মধ্যে পরামর্শক কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তবে বাকি কমিটিগুলোতে যোগ্য লোকদের পাশাপাশি কিছু বিস্ময়কর নামও রয়েছে। এই সমালোচনা প্রয়োজন, যাতে সরকার আগের আমলের মতো ‘কর্তা যা করেছেন মাইরি’ পরিস্থিতিতে না পড়ে।”

তিনি আরো জানান, “আমার মতে, এখানে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন থাকা উচিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ূন। আমি নিজে পরামর্শক কমিটিতে থাকার জন্য অনুরোধ পেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে সেখানে থাকতে চাইনি।”

ফারুকী বলেন, “পরামর্শক কমিটি থেকে যে পরামর্শ যাবে, তা যেন অংশীজনদের দ্বারা তৈরি হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল এক্সিকিউশনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। নীতি প্রণয়নে তাঁদের হাত না দেওয়াই ভালো, কারণ তাঁরা আমাদের সমস্যা ও প্রয়োজন জানেন না।”

তিনি শিল্পকলা একাডেমির জমির বিষয়ে উল্লেখ করেন, “শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের জাতিগত দুর্নাম ‘আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না’—এজন্য মাল্টিপ্লেক্সগুলোকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।”

ফারুকী আরও বলেন, “ফিল্ম ফান্ড ও সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা খুবই জরুরি। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিনের উদাহরণ রয়েছে। পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথাতে আমূল পরিবর্তন আনা, যাতে ৫০ শতাংশ ফার্স্ট এবং সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকে।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দেব? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভেন্ট ও ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং, নাকি কলকাতা আর্ট হাউজের দুর্বল কপি? আমাদের আশপাশে এমন অনেক গল্প এবং চরিত্র রয়েছে, যা নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশি নিউ ওয়েভ তৈরি করতে পারব।”

ফারুকী বলেন, “লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে স্বৈরশাসন ও দুঃশাসন প্রকাশিত হয়। আমাদের ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের কাল তুলে ধরার জন্য এই অনুদান কাজে লাগানো যায় কি না, দেখতে হবে।”

তিনি পরামর্শক কমিটির পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, “এখন যে অনুদান কমিটি রয়েছে, সেখানে যদিও এক–দুজন যোগ্য লোক রয়েছে, কিন্তু এটি অনেকটাই আওয়ামী লীগ আমলের মতোই ব্যাকডেটেড।”

শেষে, ফারুকী ব্যক্তির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “ব্যক্তির কারণেই আকাশ–পাতাল পার্থক্য রচিত হয়।”

ফারুকীর এই বিশ্লেষণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নির্দেশনা দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রের মান ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।

4o mini