বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের ছোট বোন সুমি খাতুনকে চাকরি দিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী নিয়োগপত্রটি সুমির হাতে তুলে দেন।
নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুমি খাতুনকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট (স্থায়ী) পদের বিপরীতে সেমিনার অ্যাটেন্ডেন্ট পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
নিয়োগের শর্তাবলী অনুযায়ী, সুমির পদে যোগদানের তারিখ থেকে নিয়োগ কার্যকর হবে এবং তিনি জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৮৫০০-২০৫৭০/- টাকার বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রাপ্য হবেন। চাকরির শর্তাবলী অনুযায়ী, যদি সুমি কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, তাহলে তাকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে গৃহীত ছাড়পত্র যোগদানের সময় জমা দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহণ করতে চাইলে তাকে ২ (দুই) মাসের অগ্রিম নোটিশ প্রদান করতে হবে অথবা ১ (এক) মাসের বেতন সম্পূর্ণ করতে হবে। সুমিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের আওতায় প্রণীত সকল সংবিধি, প্রবিধান, রেগুলেশন ও বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোষ্ঠী বিমায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও চাকরি প্রার্থীকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদপত্রসহ অন্যান্য সনদপত্রের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার নামাঙ্কিত সিল দ্বারা সত্যায়িত অনুলিপি, অভিজ্ঞতার সনদপত্র, শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়) এবং যোগদানপত্র নিম্নস্বাক্ষরকারীর দফতরে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আবু সাঈদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক। তার প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আন্দোলনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায়। সাহসের সঞ্চারে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ভারতে পালিয়ে যান। দেশত্যাগের সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন, যা সেনাপ্রধান ওইদিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে দেশবাসীকে অবগত করেন।
এই নিয়োগ পদক্ষেপের মাধ্যমে সুমি খাতুনের প্রতি সম্মান এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন প্রতিফলিত হয়।
সুমি খাতুনের চাকরি নিয়োগ শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করে। আবু সাঈদের বোন হিসেবে তিনি সমাজের কাছে বিশেষ গুরুত্ব রাখেন, এবং তার এই নিয়োগ তার ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি একটি সম্মান প্রদর্শন করে।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা বুঝতে শুরু করেছে এবং তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করছে। সুমি খাতুনের নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে, যা দেশের যুব সমাজকে আরও প্রেরণা দিতে পারে।
আবু সাঈদের স্মৃতিতে
আবু সাঈদের অবদান এবং তার সাহসিকতার উদাহরণ নতুন প্রজন্মকে আন্দোলনে উৎসাহিত করবে। তার মৃত্যুতে যেভাবে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল, সেভাবে সুমির নিয়োগ নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নতুন সূচনা হতে পারে। সুমি খাতুনের চাকরি গ্রহণের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার ভাইয়ের লক্ষ্য ও আদর্শের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
নতুন সম্ভাবনার দ্বার
সুমি খাতুনের চাকরি শুধু তার ব্যক্তিগত সফলতা নয়, এটি তার এবং তার পরিবারের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই নিয়োগ তার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্মোচনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সরকারী এবং বেসরকারি উভয় খাত থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সুমি খাতুনের মতো তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হলে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।