জাতিসংঘের একটি শীর্ষ কর্মকর্তা দুই বছর আগে সতর্কবাণী দিয়ে জানিয়েছিলেন, বিশ্বের ৫০টি দরিদ্র দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি টিভি১৮ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা সাতটি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভেনেজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, জাম্বিয়া এবং ঘানা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ ১৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৮ সালের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশকে ‘জাঙ্ক’ বা জঞ্জালের শ্রেণিতে চিহ্নিত করেছে।
রাজনৈতিক সংকট এবং ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ এবং পরিশোধের সক্ষমতা পূর্বেই নিম্নমুখী ছিল। এর ফলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৩২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এছাড়াও, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত কয়েক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কোনো কার্যকর সমাধান পাওয়া যায়নি। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি ১০.১ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ার ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট আরও তীব্র হতে পারে। যদিও এখনই কোনো ঋণ সংকট দেখা যাচ্ছে না, তবে অর্থনীতির ক্রমাবনতি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছে।
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করেছে। এই ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।
২০২২ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রধান আচিম স্টেইনার সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, ৫০টি দরিদ্র দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকির মুখোমুখি। দেউলিয়া হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছিলেন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা। বর্তমানে ইউএনডিপি প্রধানের সেই সতর্কবার্তা এখনো প্রাসঙ্গিক, কারণ অনেক দেশ ইতিমধ্যে দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি হয়েছে।