এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে নিজ এলাকায় একক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। শুধু বিরোধী দল নয়, নিজের দলের বিরুদ্ধ মতের নেতা-কর্মীদেরও তিনি এলাকায় থাকতে দেননি। ফজলে করিমের বিরুদ্ধে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখল, গুম, খুন, এবং স্থানীয় নির্বাচনে তার পছন্দের লোক ছাড়া কাউকে জনপ্রতিনিধি হতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তার ক্ষমতার দাপট আরও বেড়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবি, ফজলে করিমের কারণে দুই শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী রাউজানে যেতে পারেননি। তার বাহিনীর মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও ভেঙে দেন। এতদিন এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ বিচার চেয়ে আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন।
ফজলে করিম প্রথমে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)-র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, যা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি, কিন্তু প্রথমবারের নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর ২০০১ সাল থেকে টানা সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
তবে তার রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে তার সম্পদেরও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। টানা ক্ষমতায় থাকার ১৫ বছরে তার আয় ১১ গুণ বেড়ে যায়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান ফজলে করিম। ১২ সেপ্টেম্বর বিজিবি তাকে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় আটক করে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে হত্যা, গুম এবং জায়গা দখলের অভিযোগে ১২টি মামলা হয়েছে।
রাউজানে ফজলে করিমের নিয়ন্ত্রণে ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হতে থাকেন। ২০১৪ সালের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার বেশিরভাগ নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েও এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি উত্তর জেলা বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল হাছান। একইভাবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও ফজলে করিমের পছন্দের বাইরে থাকা প্রার্থী এলাকাবাসীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেননি।