চট্টগ্রামের বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, যার মধ্যে ডিম এবং মুরগির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে অধিকাংশ সবজির দাম খুচরায় ১০০ টাকার আশপাশে ঠেকেছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৭৫ শতাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে বাজারে সবজি আসছে না, ফলে দাম বেড়েছে দ্বিগুণের মতো।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর সবজির আড়ত নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারে অধিকাংশ সবজি দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে। এই বাজারে যশোর, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, জামালপুর ও মেহেরপুরসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে সবজি সরবরাহ করা হয়। তবে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের আশপাশের উপজেলা থেকেও কিছু সবজির সরবরাহ করা হয়।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ খুব কম। অল্প কিছু সবজি আসলেও সেগুলোর মান ভালো নয়। বন্যার কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে, যার ফলে বাজারে দাম চড়া হয়ে উঠেছে। দৈনিক ২০ থেকে ৩০ গাড়ি সবজি বাজারে আসত, যা আড়াই লাখ থেকে চার লাখ কেজি হলেও বর্তমানে চার-পাঁচটি গাড়ি আসছে।
বর্তমানে বেগুন, পটোল, মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য সবজির পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারে এসব সবজির দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, কাঁচা মরিচ, টমেটো, গাজর ও বরবটির দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী জানান, বন্যার পর বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
বাড়তি ডিম ও মুরগির দাম:
ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লেয়ার মুরগির প্রতিটি ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৪ টাকায়। নগরের পাহাড়তলী, চকবাজার ও বহদ্দারহাট বাজারে প্রতি হালি ডিম ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য ডিম ও ব্রয়লার মুরগি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের উৎস হলেও বর্তমানে উচ্চ মূল্যের কারণে ক্রেতাদের জন্য কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তবে চট্টগ্রামের বাজারে এখনও দাম কমেনি।
সরকারের পদক্ষেপের ফলে কিছুটা দাম কমলেও তা সাময়িক বলে মনে করা হচ্ছে। ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হলে উৎপাদন খরচ কমানো ও অসাধু জোট ভাঙতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছের বাজারে আকারভেদে রুই-কাতলা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৬০, পাঙাশ ১৬০ থেকে ২০০, রুপচাঁদা ৬০০ থেকে ১,০০০ এবং ইলিশ ৬৫০ থেকে ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মো. ফয়েজ উল্যাহ জানিয়েছেন, ডিম ও মুরগির বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং সবজির বাজারেও তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।