শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতি প্রতিদিনই অবনতির দিকে যাচ্ছে। নদীর পানির স্তর ক্রমাগত বেড়ে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে, প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রাম। ইতোমধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আর প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকাজে স্থানীয় প্রশাসন, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিজিবির পাশাপাশি ৫ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়েছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও ছয়টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৩৫ বছরের মধ্যে শেরপুরবাসী এমন ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী হয়নি।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে ১১ কোটি টাকার বেশি ধরা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, অন্তত ২০ হাজার হেক্টর আমন ধান এবং ১ হাজার হেক্টর সবজির আবাদ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৬৫ হাজারেরও বেশি।
শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ৬০ জন সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৬টি স্পিড বোর্ডের মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, “পানিবন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
নালিতাবাড়ীর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রানা জানিয়েছেন, উপজেলায় ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত হওয়া ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এবং প্রতিনিয়ত নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা দুর্গতদের দ্রুত উদ্ধারে কাজ করছি এবং ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছি।”
শেরপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সকলেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এবং বন্যা মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।