নবজাতকদের মধ্যে কিছু শিশু জন্ম থেকেই হৃদ্রোগ নিয়ে পৃথিবীতে আসে, যা সাধারণত প্রতি হাজারে ৮ থেকে ১০টি শিশুর মধ্যে দেখা যায়। এই জন্মগত হৃদ্রোগের সমস্যা শিশুর প্রথম বছরে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন করতে পারে, এবং ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিশুদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।
জন্মগত হৃদ্রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে মায়ের শারীরিক অসুস্থতা, ভ্রূণের জেনেটিক জটিলতা, এবং সংক্রমণ—যেমন টক্সোপ্লাজমা, রুবেলা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস—এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের অভাবও জন্মগত হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে। এমনকি, যদি পরিবারের এক ভাইবোন জন্মগত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়, তবে অন্য ভাইবোনেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩ থেকে ৫ শতাংশ বেড়ে যায়।
সায়ানোটিক ও অ্যাসিনোটিক হৃদ্রোগ: পার্থক্য এবং লক্ষণ
জন্মগত হৃদ্রোগকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—সায়ানোটিক এবং অ্যাসিনোটিক।
সায়ানোটিক হৃদ্রোগ: সায়ানোটিক হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে ত্বক ও নখ নীলচে হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, খিঁচুনি বা অচেতন হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
অ্যাসিনোটিক হৃদ্রোগ: অ্যাসিনোটিক হৃদ্রোগের ক্ষেত্রে শিশুর রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন থাকলেও তা শরীরে সঠিকভাবে প্রবাহিত হয় না। হার্টের ছিদ্র, ভালভের সমস্যা বা হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতার ত্রুটি থেকে এমনটি ঘটে। অ্যাসিনোটিক হৃদ্রোগে আক্রান্ত অনেক শিশুর প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া, এবং অচেতন হয়ে পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা
এই রোগের লক্ষণ দেখে বুকের এক্স-রে, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন, সিটি বা এমআরআইয়ের মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়। মৃদু অ্যাসিনোটিক হৃদ্রোগে শুধু ওষুধেই চিকিৎসা করা যায়। তবে যদি হৃদ্যন্ত্রের ছিদ্র বড় হয়, অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যদিকে, সায়ানোটিক হৃদ্রোগের চিকিৎসায় শিশুর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়। অনেক শিশুকে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হতে পারে, আর কারো কারো ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলোআপ প্রয়োজন হয়।